প্রচলিত হজ্জ-কুরবানী কুরান বিরুদ্ধ/বহির্ভূত একটি বর্বর দূ:খজনক নাটক সর্বস্ব।
হজ্জ অর্থ : শপথ/সংকল্প করা; (বাকি অর্থগুলি [অর্থ নয় তফছির] মূল অর্থের সংগে অসামঞ্জস্য কথিত ইসলামীক পরিভাষার বলে দেয়া হয়নি)
কোরবানী অর্থ: ত্যাগ/বিরত থাকা/উতসর্গ করা; অর্থাত ত্যাগের শপথ করা। সুতরাং বছরে ১বার হালাল/হারাম অর্থে পশু হত্যার অর্থ বিরত/ত্যাগ বা উতসর্গের শপথ নয়!
কি ত্যাগ/বিরত থাকার শপথ করবে?
-যে কেহ ঐ মাসগুলিতে শপথ (হজ্জ) করতে চাইলে: অশ্লীল যৌনাচার, অন্যায় আচরণ এবং কলহ-বিবাদ না (ত্যাগের) করার শপথ(হজ্জে) করবে।(তথ্যসুত্র: ২: ১৯৭)।
অর্থাত লোভ, হিংসা, মোহ, ক্রোধ, মিথ্যা, অত্যাচার-অবিচার যাবতিয় অন্যায় স্বভাব-কর্ম আজীবনের জন্য ত্যাগ/উতসর্গ করার নামই শপথ বা ‘কুরবানীর হজ্জ।‘
হজ্জের তারিখ কবে?
কোরান ঘোষিত হজ্জের তারিখ জিল হজ্জ মাসের ১ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত। কিন্তু শরিয়ত ইহা প্রত্যাক্ষান করত: আপন খেয়াল-খুশী মত ৯ থেকে ১২ তারিখ হজ্জের দিনক্ষণ পরিবর্তন করে:
[২: ১৮৯] লোকে তোমাকে নুতন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে; বল! উহা মানুষের হজ্জ ও তার সময়ক্ষণ নির্ধারক-।
উল্লিখিত আয়াতে বর্ণিত ‘লোকে তোমাকে নুতন চাঁদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে! আয়াতে ব্যবহৃত ‘আহেল্লাত’ শব্দটি ‘আল-হেলাল’ এর বহুবচন; মাসের ১লা থেকে ৩ তারিখ পর্যন্ত ‘আহেল্লাত’ বলা হয় এবং ঐ সম্বন্ধেই প্রশ্ন করা হয়েছে; কামার বা চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করেনি। উত্তরে বলা হয়েছে যে ‘আহেল্লাত’ এ মানুষের হজ্জের দিন-ক্ষণ ধার্য করা হয়েছে।
হেলাল ক্রিসেন্ট অর্থ চাঁদ নয় বরং নুতন চাঁদ; প্রতিপদ বা প্রথমা থেকে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া পর্যন্ত ধরা হয়। আরবে আজও মাসের ১লা থেকে ৩ তারিখ পর্যন্তকে ‘আহেল্লাত’ বলে। অতএব হজ্জের নির্দিষ্ট দিন-তারিখ নি:সন্দেহে মাসটির প্রথম ৩ দিন; আল্লাহর এই নির্ধারিত তারিখ খন্ডন করার শক্তি-যুক্তি বিশ্বের কারো নেই! অথচ কোরানের প্রতি বৃদ্ধাংগুলি প্রদর্শন করত শরিয়ত নিজস্ব মতে ৯-১২ তারিখে প্রতিষ্ঠা করে। আর বিশ্বের দেড় বিলিয়ণ মুসলমানগণ তা বিনা বাক্যে অনুসরণ করছে!
পশু হত্যা হবে একমাত্র প্রাচীন গৃহের (মীনায়) সামনে, দুনিয়াব্যাপী ঘরে ঘরে নয়:
[২২: ৩৩, ৩৪] ইহাতে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য; সুতরাং উহাদের স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট-।
‘নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উপকার’ অর্থে মিনায় দেশী-বিদেশী প্রচুর লোক সমাগমে পশুর গোস্ত আসু খাদ্য সমস্যার সমাধান দেয়। দুনিয়াব্যাপী পশু হত্যার বিধান কোরানে নেই; অথচ কোরানের স্পষ্ঠ বিধান লংঘন করে দুনিয়াব্যপী পশু হত্যার হুলি খেলায় মদমত্ত!
ধর্মের নামে পশু হত্যা আল্লাহ গ্রহন করেন না:
লাইইয়ানা-লাল্লা-হা লুহুমুহা-অ লা- দিমা-উহা- অলা-কিই ইয়ানা-লুহুত্তাক্বওয়া মিনকুম- (২২: ৩৭)অর্থ: আল্লাহর নিকট উহাদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় না বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া-।
ক. নালুন অর্থ: প্রধানতঃ বখশিশ, যাকে ছোয়াব/লাভ বা পুণ্য বলা হয়; সুতরাং আয়াতে বর্ণিত ‘গোস্ত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না’র পরিবর্তে পশুর গোস্ত ও রক্তে আল্লাহর নিকট কোন বকশিস (ছোয়াব) নেই অনুবাদটিই যথার্থ; অর্থাত ধর্মের নামে পশু হত্যা আল্লাহ গ্রহণ করে না, আল্লাহ তা চায় না, তার অপছন্দ হেতু তাতে কোনই ছোয়াব-লাভ নেই। এই যথার্থ অনুবাদটি প্রচারিত হলে অবলা পশুকূলের উপর মানুষের অহেতুক, অমানুষিক অপচয়, অত্যাচার বন্ধ হত!
খ. তাকোয়া: অর্থ উপরে ২: ১৯৭ নং আয়াতে বর্ণিত শপথ রক্ষার স্থীর মনোবল।
উপসংহার:
প্রচলিত হজ্জ হারাম-হালাল পার্থক্য বিহীন ধনীদের সাময়িক আমোদ-প্রমোদের অনুষ্ঠান হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত এবং তাদেরই বেহেস্ত প্রাপ্তির অলীক ধারণা বিজড়িত অনুষ্ঠান; কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ গরীবদের বছরে এক টুকরা মাংস প্রাপ্তি ছাড়া বেহেস্তের আসা-ভরসা নেই! এমন সাম্প্রদায়িক পাক্ষপাতদুষ্ট ধনীদের আমোদ-ফুর্তির আইন কোরানে নেই। অবশ্য গরীবদের শান্তনার জন্য মৌলবাদ পূর্ব থেকেই মহানবির নামে একটি আপত্তিকর অশ্লীল হাদছি রচনা করে রেখেছে যে:
‘যাদের পশু কোরবানী করার সামর্থ নেই, অর্থাত গরীব অসমর্থগণ নির্ধারিত ১০ দিন ধরে রাখা নখ, চুল, গোঁফ ও যৌন লোম চেঁছে ফেল্লে পশু কোরবানীর সমান ছোয়াব পাবে।’ (তথ্যসুত্র: আবু দাউদ, ১০ম খন্ড, হাদিছ নং- ২৭৮০, পৃ: ৭৩৫)।
অর্থাত প্রেসিডেন্ট-মন্ত্রি, রাজা-বাদশা, মওলানা, গাউস-কুতুব, ব্যবসায়ী, পীর-কেব্লা প্রভৃতি পাক/নাপাক ধনাঢ্যগণ হাজার/লক্ষ টাকা দিয়ে যে পশুটি কোরবানী করলো তার আনুপাতিক ছোয়াব তাদেরই দুয়ারে ভুখা-নাঙ্গা এক টুকরা গোস্ত প্রার্থীর চেঁছে ফেলা নখ-চুল আর যৌন লোমের সমান!
কোরান বহির্ভূত প্রচলিত শরিয়ত ইসলামকে কোথায় নামিয়েছে! তা জ্ঞানীদের ভেবে দেখার সময় সমাসন্ন।
বিনীত।
(বিশদ ব্যাখ্যা দেখুন: http://www.youngmuslimsociety.com)